সাংবাদিকতায় উচ্চতর ডিগ্রি অর্জনের আশা বুকে নিয়ে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হন ৫৫ বছর বয়সী বেলায়েত শেখ। এবার রাজশাহীর বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় ৫ম স্থান অধিকার করেছেন সেই বেলায়েত।
এর মাধ্যমে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হলো। তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে ভর্তি পরীক্ষায় চান্স পেলেন। তবে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার বিশাল খরচের কথা চিন্তা করে চান্স পাওয়ার আনন্দ নেই তার মনে।
সোমবার বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে বিভাগের সমন্বয়ক মো. শাতিল সিরাজ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই ফল প্রকাশ করা হয়। এ দিন সকাল সাড়ে ৯টায় বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। পরে দুপুর ২টায় ফলাফল প্রকাশিত হয়।
বেলায়েত বলেন, বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ৬৮ নম্বর পেয়ে ৫ম স্থান অধিকার করেছি। তবে ভর্তি নিয়ে সংশয়ে আছি। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে সাধারণত ভর্তি-সেশন ফি অনেক বেশি, অনেক টাকা প্রয়োজন। কিন্তু আমার এত টাকা-পয়সা নেই। ভর্তি ফি থেকে শুরু করে সেশন ফি পর্যন্ত আমাকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন জমা দিয়েছি। এখন তারা অনুমোদন দিলেই ভর্তি হয়ে যাব।
এর আগে ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হতে পারেননি বেলায়েত শেখ। তবে এবার বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় তিনি সফল হয়েছেন।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের কো-অর্ডিনেটর মো. শাতিল সিরাজ যুগান্তরকে বলেন, অনুষ্ঠিত ৬০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষার মধ্যে তিনি ৩২ নম্বর এবং অন্যান্য একাডেমিক ক্যারিয়ারের জন্য পেয়েছেন ৩৬ নম্বর। সব মিলিয়ে ১০০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬৮ নম্বর পেয়ে ভর্তির জন্য নির্বাচিত হয়েছেন বেলায়েত শেখ।
বেলায়েত শেখ জানান, এবার বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি জার্নালিজম, কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টে ভর্তির জন্য পরীক্ষা দিয়েছেন। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গিয়ে তিনি প্রচুর অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন। এ অর্জনে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও লেখাপড়ার ইচ্ছা পূরণ হলো।
বেলায়েত জানান, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তার দারিদ্রতার কথা চিন্তা করে ফ্রিতে পড়াশোনার সুযোগ করে দিলে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়া জন্য সহজ হতো।
বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ ডিপার্টমেন্টের কো-অর্ডিনেটর মো. শাতিল সিরাজ বলেন, বেলায়েত শেখ লিখিত আবেদন করেছেন। আমরা তা সুপারিশ করে ভিসির নিকট পাঠিয়ে দিয়েছি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের।
পরবর্তীতে ১৯৮৫ সালে বন্যা আর ১৯৯১-৯২ সালে মায়ের অসুস্থতার আর লেখাপড়া করা হয়নি। মাভক্ত বেলায়েত মনে করেন, দুনিয়াতে মা বেঁচে না থাকলে এই লেখাপড়া দিয়ে কি হবে। লেগে পড়েন মাতৃসেবায়। কাঁধে নেন পুরো সংসারের দায়িত্ব।
এসএসসি দিতে না পারায় মেকানিক্যাল কোর্স করে মোটর গাড়ির ওয়ার্কশপ কাজ শুরু করেন তা দিয়েই চলে সংসার। সঙ্গে ভাই-বোনদের পড়াশোনার দায়িত্ব পড়ে তার কাঁধে।
সবকিছু পেছনে ফেলে আবার পড়াশোনা শুরু করেন পঞ্চাশোর্ধ বেলায়েত। চলতি বছরে ঢাকা মহানগর কারিগরি কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক (এইচএসসি-ভোকেশনাল) জিপিএ ৪.৪৩ নিয়ে পাস করেন। এর আগে ২০১৯ সালে বাসাবোর দারুল ইসলাম আলিম মাদ্রাসা থেকে জিপিএ ৪.৫৮ পেয়ে মাধ্যমিক সমমান দাখিল (ভোকেশনাল) পাস করেন।