অর্থশক্তি, পেশিশক্তির ব্যবহার আর ভোট চুরির ‘অপসংস্কৃতির’ পরও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ওপর জোর দিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন যদি না থাকে, তাহলে রাজনীতিরই বিপদ।
তার ভাষায়, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক ভোট করতে রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের দায়িত্ব ঠিকঠাক পালন করতে হবে।
“পলিটিক্স থেকে কিন্তু গণতন্ত্রের জন্ম। গণতন্ত্র থেকে পলিটিক্সের জন্ম হয়নি। অনেক আগে যখন ক্ষমতা নিয়ে…, তারপর আস্তে আস্তে উনারাই সৃষ্টি করলেন গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের। সেই নির্বাচনটিকে যদি বাঁচিয়ে রাখা না যায় তাহলে পলিটিক্স উধাও হয়ে যাবে, পলিটিক্স থাকবে না। এটাকে পলিটিক্সও বলা যাবে না, গণতন্ত্রও বলা যাবে না।”
মঙ্গলবার নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপের অষ্টম দিনে এ মন্তব্য করেন সিইসি। এদিন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ, বিকল্পধারা বাংলাদেশ এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টি-এনপিপির সঙ্গে বৈঠক করেন নির্বাচন কমিশনের সদস্যরা।
রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে শুধু ‘আস্থা’ নয়, কমিশনের কাজের সমালোচনা এবং নজরদারিও চান প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল।
তিনি বলেন, “আমরা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, এই প্রতিশ্রুতির কিছু মূল্য থাকা তো উচিত। একেবারে যে আমরা ডিগবাজি খেয়ে যাব, তা তো না। সেটা হওয়ার কথা নয়।”
‘অপসংস্কৃতি’
মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দীর নেতৃত্বে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ সংলাপে অংশ নেয়। নির্বাচন অনুষ্ঠানে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা তুলে ধরে ১১ দফা প্রস্তাব পেশ করে দলটি।’অর্থ ও পেশীশক্তি’ ব্যবহারের কারণে ইসির ‘অসহায়ত্বের’ অতীত অভিজ্ঞতার কথাও তারা তুলে ধরেন।
সংলাপে সিইসি বলেন, “বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। বলতে চাচ্ছি- সমস্যাগুলো বিবেচনায় নিয়ে কীভাবে ব্যালেন্স করে অর্থবহ, যতদূর সম্ভব নিরপেক্ষ, দুর্নীতিমুক্ত নির্বাচন করা যায়, এমন কথা আমার সহকর্মীরাও বলেছেন। কাজেই আমাদের উপর আস্থা রাখেন। আস্থা রাখতে গিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখলে হবে না।”
গোপনে টাকা দিয়ে ভোট কেনার যে অভিযোগ নির্বাচনের সময় আসে, তা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হলেও এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে মনে করেন সিইসি।
তিনি বলেন, “আপনাদের নজরদারি থাকতে হবে। আমরা কি আসলেই সাধু পুরুষ? নাকি ভেতরে ভেতরে অসাধু? নজরদারি যদি না রাখেন, তাহলে আপনাদের তরফ থেকে দায়িত্ব পালন করলেন না। অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে পাঠাবেন।”
হাবিবুল আউয়ালের ভাষায়, “এখানে অপসংস্কৃতি হয়ে গেছে, পয়সা্ ঢালছে, মাস্তান ভাড়া করছে। একজন প্রফেশনাল কিলারকে হায়ার করতে খুব বেশি পয়সা লাগে না, আজকাল যেটা হয়েছে।
“অর্থশক্তি, পেশিশক্তিকে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারব না। এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার জন্য সকলকে সামাজিক আন্দোলন করতে হবে। মাঠ আপনাদের থাকতে হবে। আমাদের তথ্য দিলে আমরা আপনাদের সাহায্য করব।”
সিইসি এদিন আবারও দাবি করেন, একাদশ সংসদ নির্বাচনের দায় বর্তমান ইসির নয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে সব দায়িত্ব তারা নেবেন।
“১৮ সালের যে নির্বাচনের কথা বলেছেন, না, ওভাবে নির্বাচন হবে এটি আপনারা আশা করেন না। আমরা সেটি জানিও না, দেখিওনি। নির্বাচন নির্বাচনের আইন অনুযায়ী হবে। সময় দেওয়া হবে। ভোটাররা যাবেন। ভোট দিতে থাকবেন। আমরা আমাদের সর্বশক্তি দিয়ে আমাদের অংশের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করব।”
পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোকেও কিছু দায়িত্ব নেওয়ার অনুরোধ করেন সিইসি।
হাবিবুল আউয়াল বলেন, “আমরা দায়িত্বটা শেয়ার করব। আপনারা আমাদেরকে অবশ্যই চাপে রাখবেন। আমি বিশ্বার করি, এটা প্রয়োজন আছে। আপনাদেরকেও আমাদের উপর নজরদারি রাখতে হবে। আমাদের থেকে কোনো অনিয়ম লক্ষ্য করলে তা প্রকাশ করে দেবেন। আমরা কোনোভাবেই পক্ষপাতিত্ব করতে চাই না।”